শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০০ পূর্বাহ্ন
মোঃ জহিরুল ইসলাম সবুজ. আগৈলঝাড়াঃ
বিশ্বজুড়ে আজ মহামারী করোনার আঘাতে সবকিছু স্থবির। করোনার থাবায় বিশ্বজুড়ে চলছে লকডাউন, থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা, স্থবির হয়ে পড়েছে কর্মচঞ্চল মানুষের জীবনধারা। কিন্ত এ নিয়ে কৃষকদের যেন একেবারেই মাথা ব্যথা নেই। এমন পরিস্থিতিতেও মাঠে কাজ করছেন কৃষক। করোনা এখনও দেশের কৃষি ও কৃষককে থামাতে পারেনি। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সোনালি ধান ঘরে তোলার স্বপ্ন নিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও বিলের জমি জুড়ে বোরো ধান চাষ করেন কৃষকরা।
ফসলের তেগুলো এখন নজর কাড়ছে সোনালী রংয়ের সমারোহে। বাতাসে েেত দুলছে কৃষকের স্বপ্নের সোনালী ধান। চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষমাত্রার চেয়ে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে। এখন প্রর্যন্ত বন্যার তেমন আশঙ্কা নেই। তবে কৃষকের সুখের স্বপ্নে হানা দিয়েছে দুর্ভাবনা। গত বছরের মত এই বছরও করোনার প্রদুর্ভাবের কারণে অনেক কৃষক ধান কাটার শ্রমিক সংকটে ভুগছে একারণে এবার ফসল ঘরে তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
সোনালি ধান ঘরে তোলা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের। দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে কৃষকের। করোনা ভাইরাসের প্রভাবে বরিশালের আগৈলঝাড়ায় ধান কাটা শ্রমিকদের তীব্র সংকট রয়েছে। ফলে উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক ঘরে ধান তোলা নিয়ে দুশ্চিন্তাই দিশেহারা হয়ে পরেছেন। কেননা এখন তাদের মাঠভরা পাকা. আধা পাকা বোরো ধান। অগ্রিম চাষ করা ধানগুলো কেউ কেউ ঘরে তুলতে শুরু করেছেন।
কৃষি অফিসের তথ্য মতে, আগৈলঝাড়ায় চলতি বোরো মৌসুমে উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে মোট ৯ হাজার ৩শ হেক্টর জমি ইরি-বোরো চাষের লমাত্রা নির্ধারণ করে উৎপাদনের লমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ হাজার ৪শ ৫০ মেট্রিক টন চাল। যার মধ্যে ৪৮ হাজার ৪শ মেট্টিক টন হাইব্রীড ও ২ হাজার ৫০ মেট্টিক টন উফসী চাল। উপজেলায় মোট আবাদী জমির মধ্যে ৮ হাজার ৮শ হেক্টর জমিতে হাইব্রীড ধান ও ৫শ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফসী) বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে।
এর মধ্যে ৪শ ৫০হেক্টর জমিতে আগাম বোরো আবাদ করেছেন চাষিরা। সরকারের পূণর্বাসন বীজ সহায়তা, প্রোনোদনা, প্রকল্প ও রাজস্ব খাতের আওতায় উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের ৪হাজার ৩শ ২৫জন কৃষক পরিবারকে ধান বীজসহ বিভিন্ন ধরনের বীজ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন সরকার ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে রত্নপুর ইউনিয়নের নাগার গ্রামের বাদল বল্লভকে অর্ধেক মূল্যে দিয়েছেন।
কৃষক হারেজ সাংবাদিকদের জানান, উপজেলা জুড়ে ধান কাটা মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েক হাজার শ্রমিক এসে ধান কেটে ঘরে তুলে দেন। কিন্তু এবার কি হবে! করোনা ভাইরাস রোধে চলছে লকডাউন। এর মধ্যে কিভাবে শ্রমিকরা আসবেন। এনিয়ে সর্বত্র চলছে আলোচনা সমালোচনা। যদি শ্রমিকরা লকডাউনের মধ্যে সময় মতো আসতে না পারেন তা হলে কিভাবে ধান ঘরে উঠবে এমন দুশ্চিন্তাই কৃষদের ঘুম নেই! এমন ভাবনা যেন দূর্বল করে ফেলছে কৃষকদেরকে। চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষমাত্রার চেয়ে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসিও ফুটেছে।
আরেক কৃষক হাকিম মিয়া জানান, আমন আবাদে ধান পাকার পরেও ধান কাটতে হাতে কিছু সময় পাওয়া যায়। কিন্তু ইরি-বোরো মৌসুমে নানান রকম প্রাকৃতিক দূর্যোগ লেগেই থাকে। ফলে ধান পাকার সাথে সাথেই কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরতে হয়। এই মৌসুমে যদি শ্রমিক সংকটে সময় মতো ধান ঘরে তোলা না যায় তাহলে ব্যাপক লোকসানের কবলে পরতে হবে। তাই ধান ঘরে তুলতে কৃষি শ্রমিকদের অবাধ চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়াও কৃষকদের দাবি, সরকার যদি উপজেলার প্রত্যেক এলাকায় কৃষকদের ধান কাটার যন্ত্র দেন, তাহলে তারা নিজেরাই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারবেন।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ দোলন চন্দ্র রায় সাংবাদিকদের বলেন, উপজেলার সর্বত্র ধানের ভাল ফলন হয়েছে। যা বাম্পার ফলন হিসেবে বলা যায়। হেক্টর প্রতি হাইব্রীড ধানের ফলন হয়েছে ৮ মেট্টিক টন এবং উফসী ধানের ফলন হয়েছে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৬ মেট্টিক টন। যা উৎপাদনের লক্ষমাত্রা অতিক্রম করবে বলেও জানান তিনি।
২৮ এপ্রিল থেকে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে সরকার ধান ক্রয় কার্যক্রমের উদ্ভোধন করলেও উপজলো খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে উপজেলায় ধান ক্রয়ের বরাদ্দর পরিমান বা কবে থেকে ধান ক্রয় শুরু হবে সে বিষয়ে তাকে কিছুই জানানো হয়নি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ধান বিক্রির জন্য কৃষকের তালিকা প্রনয়নের কাজ তার অফিস করে যাচ্ছে বলেও জানান তিনি।
যেখান থেকে ধান কাটা শ্রমিক আসবেন তারা মুভমেন্ট পাস নিয়ে আসলে পথে প্রশাসনসহ কেহ বাঁধা দিবে না। তারা যে বাড়িতে আসবে তাদের থাকার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, সরকার বোরো চাষ শুরুতেই কৃষকদের বিজ ও সার বিতরন করেছে। বর্তমানে ধান কাটার মৌসুমে কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন সরকার ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে রত্নপুর ইউনিয়নের নাগার গ্রামের বাদল বল্লভকে অর্ধেক মূল্যে এই মেশিনটি দেওয়া হয়েছে।